ঢাকা , রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫ , ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুল পড়া কি থামানো সম্ভব?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় : ০৫-০৭-২০২৫ ০৪:০২:৩৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৫-০৭-২০২৫ ০৪:০২:৩৫ অপরাহ্ন
চুল পড়া কি থামানো সম্ভব? চুল পড়া কি থামানো সম্ভব?
বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে চুল পড়ার সমস্যা। নারীরা যেমন ভুগছেন, তেমনি তরুণ-প্রবীণ পুরুষদের মধ্যেও চুল পাতলা হয়ে যাওয়া বা টাক হওয়ার প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তবে চিকিৎসা, ঘরোয়া পদ্ধতি ও আধুনিক জীবনশৈলীতে কিছু পরিবর্তন আনলে চুল পড়া অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব—এমনটাই জানাচ্ছে দেশি ও আন্তর্জাতিক গবেষণা।

বাংলাদেশি গবেষণা ও বিশেষজ্ঞ মতামত

ঢাকার নামকরা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. শামীমা পারভীন জানান:

“চুল পড়ার পেছনে বংশগততা, হরমোনজনিত পরিবর্তন, পুষ্টিহীনতা ও মানসিক চাপ—সবই ভূমিকা রাখে। তবে যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু করলে চুলের স্বাস্থ্য অনেকাংশে ফিরে আসে।”

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যপোর্টাল Medex অনুসারে, বর্তমানে দেশে মিনোক্সিডিল নামক ওষুধটি অনেক প্রসিদ্ধ, যা "Grow Hair 5%" এবং "Trugain 5%" নামে বাজারে পাওয়া যায়। এটি ৫% ঘনমাত্রায় ব্যবহৃত হয়, এবং পুরুষ-নারী উভয়ের জন্য উপযোগী।

এছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা (২০২২) জানায়, মিনোক্সিডিলের পাশাপাশি কম ডোজের ওরাল (মৌখিক) সেবনের ক্ষেত্রেও কার্যকারিতা লক্ষ্য করা গেছে, যদিও এর জন্য চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান আবশ্যক।

আন্তর্জাতিক গবেষণা কী বলছে?
American Academy of Dermatology (AAD) এবং Journal of Dermatological Treatment-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মিনোক্সিডিল স্ক্যাল্পে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে চুলের ফলিকলকে পুনর্জীবিত করে। ২% ও ৫% ঘনমাত্রার মিনোক্সিডিল নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া মিনোক্সিডিল ছাড়াও Finasteride পুরুষদের জন্য ব্যবহৃত একটি চিকিৎসা, যা DHT নামক হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে চুল পড়া হ্রাস করে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ব্যবহৃত Low-Level Laser Therapy (LLLT) বা লেজার হেয়ার ক্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে ফলিকলের রিজেনারেশন সম্ভব।

 

রোগীদের অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশি অনলাইন ফোরামগুলোতেও মিনোক্সিডিল নিয়ে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা মিশ্র হলেও অনেকেই সন্তুষ্ট:

“আমি Trugain ৫% প্রায় দেড় বছর ধরে ব্যবহার করছি। প্রথমে একটু বেশি চুল পড়েছিল, কিন্তু ধৈর্য ধরে চালিয়ে যাওয়ার ফলে এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।” – ব্যবহারকারী: রেদোয়ান, ঢাকা

“Ketoconazole শ্যাম্পু, মিনোক্সিডিল ও ভালো ডায়েট মিলিয়ে আমার চুল আবার ঘন হয়ে উঠছে।” – ব্যবহারকারী: সামিয়া, নারায়ণগঞ্জ

ঘরোয়া পদ্ধতির গুরুত্ব

চিকিৎসার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা ঘরোয়া যত্ন ও সুষম খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দেন। যেমন:

ভিটামিন A, B, C, D, E, আয়রন, জিঙ্ক ও ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার
চিয়া সিড, কালোজিরা ও সূর্যমুখী বীজের জল
কলা ও মধুর হেয়ার মাস্ক
স্যাটিন বালিশের কভার, হালকা হ্যান্ডলিং ও রুটিন অয়েলিং

চুল পড়া একটি সাধারণ ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলেও মাত্রাতিরিক্ত হলে তা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে বাংলাদেশে এখন রয়েছে উন্নত মানের ওষুধ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা, এবং বিশ্বমানের গবেষণার ভিত্তিতে গৃহীত ঘরোয়া যত্নের পদ্ধতি। বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর তৈরি মিনোক্সিডিল যেমন সহজলভ্য, তেমনি আন্তর্জাতিক গবেষণার সমর্থন রয়েছে এসব চিকিৎসায়।

চুল পড়া রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেওয়া, নিয়মিত যত্ন নেওয়া, সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া।
 

 

তথ্যসূত্র:
Medex Bangladesh - Minoxidil তথ্য
Journal of Dermatological Treatment (USA)
American Academy of Dermatology (AAD)

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ